ফেনীতে অনুমোদনহীন একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালটি সীলগালা করে দেওয়া হয়েছে। রোববার (১১ জুন) সকালে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত এটি সীলগালা করে  বন্ধ করে দেন।

এ সময় ভ্রাম্যমান আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সুবল চাকমা, জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষে চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) আশিফ উদ্দোলা, ফেনী সদর উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে ছিলেন চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) যোবায়ের ইবনে খায়ের। এতে ফেনী মডেল থানা পুলিশ সহযোগিতা করে।

ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম মাসুদ রানা জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় ফেনী শহরের দাউদপুর এলাকায় ‘আল মদিনা’ নামে একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় একটি শিশু মারা গেছে। এ প্রেক্ষিতে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ স্বপ্রনোদিত হয়ে রোববার একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় দেখা যায়,  হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কোন অনুমোদন নেই। তা ছাড়া হাসপাতালের অভ্যন্তরে ওটি, প্যাথলজী, ওয়ার্ডসহ নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা বিদ্যমান। এরপর ভর্তি রোগীকে ফেনী সদর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করে ওই ‘আল মদিনা’ হাসপাতাল সীলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  গত কিছু দিন আগে ফেনী শহরের দাউদপুর এলাকায় কাঁচা বাজার সবজীর আড়তের পাশে ‘আল মদিনা’ নামে এই বেসরকারী হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়৷

গত শনিবার ওই আল মদিনা হাসপাতালে ওসমান গনি (৫) নামে একজন শিশুকে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় ভূল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে এবং স্বজনরা চিকিৎসককে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

শিশু মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনরা ক্ষুদ্ধ হয়ে চিকিৎসক আদনান আহমেদকে মৃতদেহের সাথে রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে ফেনী মডেল থানা পুলিশ ওই স্থানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

নিহত শিশুর বাড়ি ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়নের খাইয়ারা বাজারের পাশে।

শিশুর বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, হার্নিয়া রোগের অপারেশনের জন্য শনিবার দুপুরে তিনি তার ছেলেকে এ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কথা ছিলো সন্ধ্যার পর অপারেশন হবে। কিন্তু বিকেল সাড়ে চারটায় ডাক্তার এসে ইনজেকশন পুশ করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষন পরেই ছেলের মৃত্যুর খবর আসে।

শিশুর বাবা সাইফুল অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে ভুল অপারেশন করা হয়েছে এই কারণেই মৃত্যু হয়েছে।

অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, রোগীর অপারেশন ৬টায় হবার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগে জানায় নি। তবে রোগী হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে।

স্বজনদের অভিযোগের বিষয়ে ওই হাসপাতালের সার্জন ডা: মো. আদনান আহম্মেদ বলেন, অপারেশন সঠিকভাবে হয়েছে, রক্তক্ষরণও হয়নি। তবে রোগী হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে।

ঠিক তখনই অভিযোগ ওঠে- ওই অপারেশন হওয়া হাসপাতালটির অনুমোদন নেই। এ বিষয়ে হাসপাতালের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, তিনি এ ব্যবসায় নতুন। তবে অনুমোদন নিতে বা সনদের বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না।

ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে  পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু রোববার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায় নি।

ফেনী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম মাসুদ রানা জানান, ভ্রাম্যমান আদালতকে তারা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারে নি।  অনুমোদনহীন হাসপাতালটি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সিভিল সার্জন অফিসে জমা দিতে বলা হয়েছে।